সূচীপত্র

সোমবার, ফেব্রুয়ারী ১২, ২০১৮

নিদান- এটা কোন গল্প নয়

বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বের হয়ে ঢাকায় আসার পর আমি একবার খুব নিদানে পড়েছিলাম। সে সময় দুশ্চিন্তায় শরীরখানা খুব জীর্ণ হয়ে উঠেছিল। একদিন বহুদূর থেকে হেঁটে এসে ভরদূপুরবেলায় চারুকলার সামনের ছবির হাটে এসে পৌঁছলাম।অনেকক্ষণ হেঁটে খুব ক্লান্ত লাগছিল।ভাবলাম, একটু জিরিয়ে নিই। পার্কের গেট পার হয়ে ভেতরে ঢুকে কোণার দিকের একটি চায়ের দোকানে গিয়ে বসলাম। খুব খিদে পেয়েছিল। পকেটে চার পাঁচ টাকার বেশি ছিল না। ওটা দিয়ে চা-টা খেলাম। সেদিন খুব ভাত খেতে ইচ্ছে হয়েছিল। উপায় ছিল না। মনে আছে, সেদিন বহুক্ষণ বসে বসে এটা ওটা দেখেছিলাম। তারপর নীলক্ষেত হয়ে মোহাম্মদপুরের দিকে হাঁটা ধরলাম।
তার কয়েক বছর পর কী কারণে যেন ওদিক দিয়ে আসছিলাম। ততদিনে দুর্দিন গেছে। পকেটে টাকা পয়সাও ছিল বেশ। সময়ও ছিল। ভাবলাম, যাই, সেদিনের সে জায়গাটায় গিয়ে একটু বসি। গেলামও। চা খেতে খেতে ভাবলাম, সেদিনের আমার মতো নিদানে পতিত কাউকে যদি পাই তবে পেট ভরে ভাত খাওয়াবো, এটা সেটা যা খেতে চায় খাওয়াবো। ঘুরতে চাইলে ঘুরাবো। লাগলে টাকা পয়সাও দেব। সেদিন প্রচন্ড আবেগে কেমন অদ্ভুত হয়ে উঠেছিলাম। ওখানে বসে বসে বিচিত্র সব চিন্তা ভাবনা করছিলাম।
হঠাৎ দেখি উশকু খুশকু চুলের একটি ছেলে এদিকেই আসছে।পরনে রঙজ্বলা জিন্স আর অতীব পুরনো টি-শার্ট। এসে বসলও আমার পাশে। ভাবলাম, আমি কি সত্যি সত্যিই যাকে চাচ্ছিলাম পেয়ে গেলাম? চুপচাপ ছেলেটাকে ফলো করছিলাম। ছেলেটিও চুপচাপ বসে ছিল। ভাবলাম, ছেলেটার সাথে একটু আলাপ জমিয়ে দেখি তো দেখি। কথা বলার ঠিক আগ মুহুর্তেই ছেলেটি চা দোকানি বলে উঠল- ‘মামা চা দিও তো।’ এরপর পকেট থেকে সিগারেটের প্যাকেট বের করল। বেনসন এ্যান্ড হেজেস। প্যাকেটে অনেকগুলো সিগারেট।
কথা আর বলা হল না। ছেলেটা সিগারেট ধরালো। চা নিয়ে আপন মনে চুমুক দিতে লাগল। একটু পর আরেকটি ছেলে আসল।হাতে রঙতুলি, ক্যানভাস। এদের কথোপকথনে স্পষ্ট হলো এরা বন্ধু। বুঝলাম- এরা শিল্পী। ছবি আঁকে।
আমি মোহাম্মদপুরের দিকে রওনা দিলাম।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন