সূচীপত্র

শুক্রবার, আগস্ট ১৮, ২০১৭

জার্মান স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ‘ব্ল্যাক রাইডার (১৯৯২)’ এবং আমাদের সাম্প্রদায়িকতা



মিন্টু শাহজাদা 

ব্ল্যাক রাইডার (Black Rider) পেপে ডানকুয়ার্ট (Pepe Danquart) পরিচালিত ১৯৯২ সালের একটি জার্মান স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র। ছবিটির মূল নাম শোয়ার্জফাহরার (Schwarzfahrer)। ইংরেজিতে জার্মান শব্দ ‘Schwarzfahrer’ এর শাব্দিক অর্থ ‘fare dodger’, বাংলায় যার মানে দাঁড়ায়,  ‘সুকৌশলে যে ব্যক্তি গাড়ি ভাড়া ফাঁকি দেয়।’ তবে জার্মানিতে Schwarzfahrer শব্দ দ্বারা মূলত বোঝানো হয় Black Rider বা কৃষ্ণাঙ্গ যাত্রীদেরকে। নামকরণের মধ্যেই এ ছবির মূল বার্তা অনুধাবনীয়। সম্পূর্ণ সাদা-কালো এ ছবিটি ১৯৯৪ সালে বিষয়ভিত্তিক শ্রেষ্ঠ ছোটছবি ক্যাটাগরিতে অস্কার পুরস্কার লাভ করে।

মাত্র ৯ মিনিট ৫৯ সেকেন্ড দৈর্ঘ্যের এ ছবিটি শুরু হয় জার্মানির কর্মব্যস্ত বার্লিন শহরের একটি ট্রাম স্টেশনে মানুষের ব্যস্ত পদচারণার দৃশ্য দিয়ে। ছোট ছোট কয়েকটি দৃশ্যের অবতারণার মাধ্যমে ট্রাম স্টেশনের একটি প্রকৃতি তুলে ধরা হয়। একজন মোটর বাইকার (Stefan Merki) যে তার মোটর বাইকে স্টার্ট দিতে ব্যর্থ হয়, ট্রাম স্টেশনে ট্রামের জন্য অপেক্ষারত নানা বয়সের যাত্রী, একটি কৃষ্ণাঙ্গ যুবক (Paul Outlaw) যে তার বন্ধুর সাথে খোশগল্পে মগ্ন, ট্রাম স্টেশনে ভেড়ামাত্র সবাই গিয়ে ট্রামে উঠে পড়ে। কৃষ্ণাঙ্গ যুবকটি শেতাঙ্গ বৃদ্ধার (Senta Moira) পাশের খালি সিটে গিয়ে বসে। বৃদ্ধা খুব বিরক্ত হয়। কৃষ্ণাঙ্গ যুবকটি তাকে পাত্তা না দিয়ে বরং পকেট থেকে স্ন্যাক্স বের করে চুপচাপ বসে বসে অনবরত মুখে দিয়ে চিবোতে থাকে। বৃদ্ধা বিরক্ত হয়ে বলে, ‘তুমি কেন অন্য কোথাও গিয়ে বসলে না। সিট তো আরো ফাঁকা ছিল। কাউকে বিরক্ত না করে অন্য কোথাও গিয়ে বসলেই তো হয়।’
বাচাল বৃদ্ধাটি কৃষ্ণাঙ্গ যুবকটিকে শুনিয়ে শুনিয়ে অনবরত বলতে থাকে, ‘তোমরা যদি আমাদের দেয়া ট্যাক্সের পয়সা দিয়েই বেঁচে থাক তাহলে কেন ঠিকঠাক আচরণ কর না।’ ট্রামের আর সব যাত্রী বৃদ্ধার বকবকানি শুনতে থাকে। কেউ কিচ্ছু বলে না। কেবলমাত্র একটি ছোট্ট বালক বৃদ্ধার কান্ড কারখানা দেখে মিটমিটিয়ে হাসে। কয়েকজন যুবক ও যুবতী এটা নিয়ে কানাকানি, হাসাহাসি করলেও তা বেশ নিরবে। বৃদ্ধা বকতে থাকে, ‘আমাদের নিয়মাচার এত কঠিনও নয় যে তা কেউ পালনে অভ্যস্ত হতে পারবে না। তোমরা এদেশে আস কি করতে? তোমাদেরকে কি কেউ ডেকে এনেছে? আমরা নিজেরাই নিজেদেরকে সামলাতে পারি। এইসব অসভ্য লোকেদেরকে আমাদের কোন দরকার নেই।’ 

কৃষ্ণাঙ্গ যুবকটি চুপচাপ খাবার চিবোতে থাকে। কোন প্রতিবাদ করে না। ট্রামের অন্য যাত্রীদের সাথে নিরবে বৃদ্ধার বকবকানি সহ্য করে যায়। বৃদ্ধা বলতে থাকে, ‘আমাদের নিজেদের মধ্যেই অনেক বেকার আছে। অথচ এরা অনেকেই অবৈধভাবে কাজ করে এখানে। এরা সবাই দেখতেও একই রকম। এদেরকে নিয়ন্ত্রন করা খুব কঠিন। আমাদের উচিত এদেশে ঢোকার আগেই এদের নামগুলো পাল্টে দেয়া। আমরা কেন তাদেরেকে আলাদা করি না?
ট্রামের অন্য যাত্রীরা মাঝে মাঝে একে অপরের দিকে মুখ চাওয়াচাওয়ি করে। কৃষ্ণাঙ্গ যুবকটি চুপচাপ খাবার চিবোতে থাকে। শেতাঙ্গ বৃদ্ধাটি বলে যায়, ‘আর কি? তোমাদের গন্ধটাও তো বাজে। অথচ এর বিরুদ্ধে কোন আইন নেই।’ 

ট্রাম এসে আর একটি স্টেশনে থামে। কিছু লোক নেমে যায় আর কিছু ওঠে। বৃদ্ধা মহিলা বকবকানিতে এবার একটু বিরতি দেয়। তারপর ট্রাম ছেড়ে দিলে আবার শুরু করে, ‘ভাবচক্কর দেখে তো মনে হচ্ছে কেবল ইটালিয়ান কিংবা তুর্কিরাই নয়, এখন তো আফ্রিকানদের অর্ধেকই আসতে শুরু করে দিয়েছে।’  ট্রামের এক কিশোর হঠাৎ কি একটা বলতে যায় কিন্তু তার বন্ধুরা তাকে থামিয়ে দেয়। বৃদ্ধা অনবরত বলতেই থাকে, ‘আগে আমরা এদের সবাইকে এখানে আসতে দিতাম না। আমার উনি সবসময় বলতেন, তুমি যদি এদের একজনকে এদেশে আসতে দাও, দেখবে আস্তে আস্তে সবাই এসে হাজির। এরা ইঁদুরের মতোন বংশ বিস্তার করবে আর সাদা কালোকে মিশিয়ে একাকার করে দেবে। এটাতে অবাক হওয়ার কিছু নেই যে এদের সবার শরীরেই এইডস আছে। আমরা এদের থেকে কখনই আর মুক্তি পাব না যদি এরা এভাবে আসতেই থাকে। আমরা কোন দেশের মধ্যে আছি এটা তো বলাও যাবে না।’

ট্রাম এসে পরের স্টেশনে থামে। টিকেট চেক করার জন্য কন্ট্রোলার ওঠে। একে একে টিকিট চেক করতে থাকে ট্রাম কন্ট্রোলার। সেই শ্বেতাঙ্গী মোটর বাইকার যে ব্যস্ততার জন্য টিকেট না নিয়েই দৌড়ে ট্রেনে উঠেছিল, সে ধরা পড়ে যাওয়ার ভয়ে মনে মনে প্রমাদ গোনে। বুড়ি ব্যাগ হাতড়িয়ে টিকেট খুজতে খুঁজতে বকবক করতে থাকে, ‘বাইরে যেতেই তো ভয় লাগে! আজকাল পত্রিকা খুললেই যা দেখি! দেশটা যেন লঙ্গরখানা। এই তুর্কিগুলো তো কোন কাজই করতে চায় না। কি হাস্যকর!’



অন্য সবার মত বৃদ্ধা টিকেট বের করে হাতে ধরে রাখে। হঠাৎ বৃদ্ধার হাত থেকে টিকেটটি এক ঝটকায় টান দিয়ে নিয়ে গিলে ফেলে কৃষ্ণাঙ্গ যুবকটি। বুড়ি হতভম্ভ হয়ে যায়। সবাই ঘটনাটি প্রত্যক্ষ করলেও নির্বিকারই থাকে। এতক্ষণ যেমন ছিল। শুধু ছোট্ট বালকটি দেখে হাসতে থাকে আর তার মাকে বলে, ‘মা, দেখ, দেখ।’ মা-ও নির্বিকার।


পরক্ষণেই কন্ট্রোলার আসে। টিকেট দেখাতে বলাতে বৃদ্ধা বলে যে, তার টিকেটটি পাশের কালো যাত্রীটি খেয়ে ফেলেছে। কন্ট্রোলার কৃষ্ণাঙ্গ যুবকটির দিকে তাকালে সে বিনয়ের সাথে তার কার্ড দেখায়। কন্ট্রোলার বৃদ্ধাকে ট্রাম থেকে নেমে তার সাথে যেতে বলে। বৃদ্ধা চেঁচাতে থাকে কিন্তু কন্ট্রোলার তার কথা বিশ্বাস করে না, ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী অন্য যাত্রীরাও কেউ কিছু বলে না। দুর্ভাগ্যক্রমে বৃদ্ধা নিজেই একজন Schwarzfahrer হয়ে ওঠে এবং শাস্তির সম্মুখীন হয়। বুড়ি যখন কালো লোকটিকে অনবরত ধুয়ে দিচ্ছিল যাত্রীসাধারণ তখনও যেমন নির্বিকার ছিল এখনও তেমনই নির্বিকার আছে। শেষমেষ ট্রাম কন্ট্রোলার ট্রাম থেকে বৃদ্ধাকে অ্যারেস্ট করে নিয়ে যায় এবং ট্রাম স্টেশন ছেড়ে চলে যেতে থাকে। সিনেমা এখানেই শেষ হয়। 


ব্ল্যাক রাইডার ছোটছবিটির চিত্রনাট্য পরিচালকের নিজের। অল্প কয়েক মিনিটের ছবিতে পরিচালক খুব মুন্সিয়ানার পরিচয় দিয়েছেন। কট্টর সাদাপন্থীদের দৃষ্টিভঙ্গি এবং কালোদের আচরণের সুক্ষ আখ্যান এ চলচ্চিত্র। ছবিটি দেখে বেশিরভাগেরই মনে হতে পারে এটা বর্ণবাদ বিরোধী চলচ্চিত্র। আদতে কি তাই? জ্ঞানীদের জন্য নিদর্শণ আছে। পুরো সিনেমা জুড়ে বৃদ্ধা শ্বেতাঙ্গিনীর বর্ণবাদী বকবকানি শুনে বর্ণবাদ বিরোধী, প্রগতিশীল দর্শক বিরক্ত হবেন, এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু সুক্ষভাবে লক্ষ্য করলেই দেখা যাবে বৃদ্ধার এই বকবকানির মধ্য দিয়ে চলচ্চিত্রকার কালোদের প্রকৃতি ও আচরণের সুক্ষ বিশ্লেষন করেছেন এবং তাদের পরিচয় উন্মোচন করেছেন। বৃদ্ধার কাঁধে বন্দুক রেখেই চলচ্চিত্রকার বন্দুকটি ফুটিয়েছেন। 

কৃষ্ণাঙ্গ যুবকটি বৃদ্ধার অপমানের মৌখিক জবাব দিতে পারত কিংবা সম্ভব না হলে উঠে গিয়ে অন্যত্র বসতে পারত। তা না করে সে চুপচাপ বসে সুযোগের অপেক্ষায় ছিল। সুযোগ বুঝে বৃদ্ধার ট্রামের টিকেট খপ করে গিলে ফেলা কোন সভ্য মানুষের চিন্তায় আসার কথা নয়। এতক্ষণে বৃদ্ধা কালোদের যে চরিত্রহনন করছিল কিংবা কালোদের আচরণ ও প্রকৃতির যে বর্ণনা দিচ্ছিল কৃষ্ণাঙ্গ যুবকটির এহেন আচরণের মাধ্যমে চলচ্চিত্রকার তা সত্যিতে প্রমাণিত করেছেন। পক্ষান্তরে গোড়াপন্থী বৃদ্ধার আচরণের শাস্তি হিসেবে তাকে Schwarzfahrer বানিয়ে কন্ট্রোলারকে দিয়ে অ্যারেস্ট করিয়েছেন। অথচ সমস্ত ছবিতে দর্শক পরিষ্কার দেখতে পায় ট্রামে Schwarzfahrer বৃদ্ধাও নয়, কৃষ্ণাঙ্গ যুবকও নয় বরং একমাত্র Schwarzfahrer সেই মোটরবাইকার যিনি ব্যস্ততার কারণেই টিকেট কাটার সময় পাননি, টিকেট না কেটে দৌড়ে গিয়ে ট্রামে উঠেছিলেন। অথচ মোটরবাইকার Schwarzfahrer হয়েও বেঁচে গেছেন।

বৃদ্ধা যখন তার কথার বাণে কৃষ্ণাঙ্গ যুবককে ক্রমাগত অপমান করে যাচ্ছিল তখন প্রতিবাদ তো দূরে থাক ট্রামের সারা বগির কোন যাত্রীই টু শব্দ পর্যন্ত করেনি। অথচ সবাই তা শুনছিল। একইভাবে বৃদ্ধার টিকেটটি যখন কৃষ্ণাঙ্গ যুবকটি গিলে ফেলে তখনও সবাই তা দেখেছে। বৃদ্ধাকে যখন অ্যারেস্ট করে নিয়ে যাওয়া হয় তখন বগির সাধারণ যাত্রীরা প্রকৃত ঘটনা কন্ট্রোলারকে জানাতে পারত কিন্তু তারা তা করেনি বরং নির্বিকার ছিল। এ থেকে প্রমাণিত হয় সাধারণ যাত্রীদের বর্ণবাদী শ্বেতাঙ্গিনী এবং উশৃঙ্খল কৃষ্ণাঙ্গ যুবক কারো প্রতিই কোন আগহ নেই কিংবা দুই পক্ষের কারো পক্ষে জড়িয়ে যাওয়া নিরাপদ মনে করেনি।


বাংলাদেশের মানুষ শান্তিপ্রিয় ও ধর্মপ্রাণ। ধর্মীয় রীতি ও আচার তাদের জীবনের সাথে নিবিঢ়ভাবে মিশে আছে। ধর্ম বাদ দিয়ে তাদের জীবন কল্পনা করা বোকামি। মূলত ধর্মীয় অনুশাসন ও নিয়মকানুন দ্বারাই তাদের জীবন সুশৃঙ্খলভাবে পরিচালিত হচ্ছে। এটা অস্বীকার করার কোন উপায় নেই যে পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্রসহ প্রায় সব সংগঠনই প্রতক্ষ কিংবা পরোক্ষভাবে ধর্মীয় নীতি ও কাঠামোর উপরই প্রতিষ্ঠিত। বাংলাদেশ যেহেতু মুসলিম অধ্যুষিত দেশ, তাই এদেশের নিয়মনীতি, জীবনাচারে মুসলিম নিয়মের প্রাধান্য থাকাটাই স্বাভাবিক। এটা বাস্তবতাও বটে। মুসলিম দেশ হিসেবে রাষ্ট্রনীতি, সমাজনীতি, শিল্প-সাহিত্য এবং সামষ্টিক জীবনে মুসলিম রীতির প্রাধান্য থাকাটাও অস্বাভাবিক নয়। আমাদের পাশ্ববর্তী দেশ ভারতেও সকল ক্ষেত্রে হিন্দু রীতির প্রাধান্য বিদ্যমান। তাই বলে সে দেশ সাম্প্রদায়িক দেশ নয়, যেমন করে আমাদের বাংলাদেশ অসাম্প্রদায়িক। তবে বাংলাদেশে মুসলিম বাদে অপরাপর ধর্মের মানুষের সকল অধিকার সংরক্ষিত হয় না এমন কোন নীতি বাংলাদেশের রাষ্ট্রনীতিতে প্রচলিত নেই। তাই এ নিয়ে কোন সমস্যা থাকার কথা নয়। এ কথা অস্পষ্ট নয় যে, সংখ্যাগুরুদের দ্বারা মাঝে মাঝে সংখ্যালঘু নিপীড়নের যে খবর আসে তা নিতান্তই রাজনৈতিক এবং অনেক ক্ষেত্রেই ধর্ম সম্বন্ধে জ্ঞানহীন কতিপয় লোকেদের গোয়ার্তুমি ছাড়া কিছু নয়। কোন ধর্মেই অন্য ধর্মের মানুষকে আক্রমন করাকে সমর্থন করে না। এসব ক্ষেত্রে যে সকল প্রগতিশীলতার ধ্বজাধারীগণ সংখ্যাগুরুদের ধর্মকে ক্রমাগত দোষারোপ করে তৃপ্তি লাভ করে, তাদের জ্ঞান ও প্রজ্ঞা নিয়ে সন্দেহের অবকাশ আছে।     


একটা কথা মনে রাখা দরকার যে, অসাম্প্রদায়িকতা ও মুসলিম বিদ্বেষ এক কথা নয়। অথচ কেউ কেউ অসাম্প্রদায়িকতার নামে প্রত্যক্ষ কিংবা পরোক্ষভাবে মুসলমানদের ছিদ্রান্বেষন করাকে প্রগতিশীলতা বলে ভাবেন, যা ভুল। তাদের চিন্তা ও লেখায় এটা প্রবলভাবে স্পষ্ট যে, ধর্মীয় জ্ঞান ও বিষয়ের গভীরভাবে অধ্যয়ন এবং ধর্মীয় দর্শনের গভীর অনুধাবন তাদের যারপরনাই কম। শুধুমাত্র দৃষ্টি আকর্ষন কিংবা জনপ্রিয়তার আশায় কেউ কেউ এরকম চিন্তা ও চিন্তার প্রকাশ করে থাকতে পারেন। ভুল চিন্তাকে যত বড় ভিন্ন চিন্তা হিসেবেই অভিহিত করা হোক না কেন তা সমাজের জন্য হিতকর নয়। যে কোন ভুল চিন্তা জনপ্রিয় হলেও হতে পারে তবে তা কোনভাবেই অনুসরণীয় বা অনুকরণীয় হতে পারে না। ধর্মীয় ছিদ্রান্বেষন করার আগে অবশ্যই সে ধর্ম সম্বন্ধে পরিষ্কার জ্ঞান অর্জন ও সে ধর্মীয় দর্শনের গভীর অনুধাবন আবশ্যক। ধর্ম সম্বন্ধে শুধুমাত্র ভাসা ভাসা ধারণা নিয়ে কিংবা ধর্মীয় ভুয়া ফতোয়ার (যা বকধার্মিক কর্তৃক সৃষ্ট, প্রকৃতপক্ষে ধর্মের সাথে এর কোন সম্পর্ক নেই) উদ্ধৃতি দিয়ে ধর্মের সমালোচনা কোনভাবেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। 

আমাদের বাংলাদেশে গত কয়েক বছর ধরে মাঝে মাঝেই বিভিন্ন সাম্প্রদায়িক ইস্যুতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ বিভিন্ন প্রচার মাধ্যম সরগরম হয়ে ওঠে। ধর্মীয় বিষয়কে কেন্দ্র করে একাধিক মতের লোকেরা মাঝে মাঝেই পরস্পর তর্কযুদ্ধে অবতীর্ণ হয়। অথচ এরা সংখ্যায় খুবই নগন্য। শুধুমাত্র কতিপয় অ্যাকটিভিস্ট ছাড়া এহেন কাদা ছোড়াছুড়িতে দেশের সাধারণ জনগণের খুব বেশি আগ্রহ আছে বলে মনে হয় না। ধর্ম নিয়ে বাদাবাদির তুলনায় বরং এরা ধর্ম পালনেই বেশি অভ্যস্ত, আগ্রহী। কেননা কোন ধর্মই ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি সমর্থন করে না। তাই সাধারণ মানুষ পারতপক্ষে এসব তর্কাতর্কিতে বেশ বিরক্তই হয়। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির এই বাংলাদেশে হিন্দু, মুসলিম, বৌদ্ধ, খৃস্টানসহ সকল ধর্মের, সকল মতের, পথের মানুষ পরস্পর মিলে মিশেই ছিল এবং এখনও আছে। ষোল কোটি মানুষের বাংলাদেশে শিক্ষিত, অর্ধ-শিক্ষিত, স্বশিক্ষিত মানুষগুলো যার যার জীবন যাপন নিয়েই ব্যস্ত সময় পার করে। নানা ধর্মের, নানা শ্রেনীর, নানামতের মানুষেরা সামাজিকভাবে একে অপরের উপর নির্ভরশীল। কট্টর সেক্যুলার কিংবা কট্টর ধর্মাচারী কারুর সাথেই মিশতে কিংবা পক্ষালম্বন করতে এরা নিরাপদ বোধ করে না। ফলে এ সমস্ত বিষয়ে কি মুসলিম, কি হিন্দু অথবা বৌদ্ধ কিংবা খৃস্টান, সাধারণ জনগণের কারোরই কোন আগ্রহ কিংবা অংশগ্রহণ কোনটাই নেই। অনেকটা ব্ল্যাক রাইডার চলচ্চিত্রের ট্রামের সাধারণ যাত্রীদের মতই।   


 

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন