মিন্টু শাহজাদা
কিছুদিন আগে ফেসবুকে কার স্ট্যাটাসে যেন মা-বাবাকে চোখের সামনে বয়স বাড়তে দেখে দু:খ করতে দেখেছিলাম। আসলেই তো তাই।
দু:খ করার বিষয়! বড় আতংকের বিষয়! এটা তো কখনও আলাদা
করে ভাবিনি কিংবা খেয়াল করিনি। ধন্যবাদ সেই বন্ধুকে যিনি এই সত্যটাকে বিশেষভাবে উপলব্ধি
করতে সুযোগ করে দিয়েছেন।
বয়স বাড়ছে আমাদের! পাল্লা দিয়ে বাড়ছে মায়েদের-বাবাদের! এর চেয়ে বড় আতংকের বিষয় আর কী হতে পারে?
পৃথিবীতে মা-বাবাই সবচেয়ে বড় সম্পদ। এ সম্পদ যাঁর
নাই আমি জানি না তাঁর কেমন লাগে (অনুগ্রহ করে ক্ষমা করবেন, মনে করিয়ে দিয়ে কারো মনে
বেদনার জন্ম দিতে আমি চাইনি। প্রাসঙ্গিক বলেই কথাগুলো বলছি।)।আমি অত্যন্ত ভাগ্যবান
(আলহামদুলিল্লাহ)যে, এখনও আমি প্রাণ ভরে মা-কে, আব্বাকে ডাকতে পারি, কথা বলতে পারি,
অভিমান করতে পারি, ভালবাসতে পারি। আমি চাই আমার শেষদিন পর্যন্ত যেন এমন সুযোগ পাই।
সৃষ্টিকর্তার কাছে আমার এই প্রার্থনা।
গত ক’বছরে বেশ ঘন ঘনই বাড়িতে যাই। মা আর আব্বার জন্য
মনটা কেমন করে! আমি জানি না ইদানিং কেন এমন হচ্ছে। বড় ভয় হয় আমার, আমাদের!
মায়ের প্রেসার ওঠানামা’র সাথে সাথে আমাদের স্নায়ুচাপও
কেমন ওঠানামা করে আজকাল।মা-আব্বাকে ঢাকা নিয়ে আসি, দু’একদিন যেতে না যেতেই আর থাকতে
পারে না। ভিটেমাটির মায়া, গাঁয়ের ছায়া, ঠান্ডা মাটি, বড় উঠান, আম-কাঁঠালের গাছ- এসব
হয়ত হাতছানি দিয়ে ডাকে। ঢাকাতে অল্প কিছুদিন থাকতে না থাকতেই কেমন চোখ মুখ ফুলে যায়
মা’র, আব্বা’র, শরীর ভারি হয়ে ওঠে, হাত-পা ব্যথা করে। বলে- ‘বাজান, দিয়ে আয় বাড়িতে।
আবার আসব পরে।’ বুকের ভেতরটা কেমন হু হু করে ওঠে আমাদের।
আমরা পাঁচ-ভাই বোন। কর্মক্ষেত্র, লেখাপড়া কিংবা সাংসারিক
কারণে সবাইকেই থাকতে হয় ঢাকায় এবং ঢাকার আশপাশে। আমি বলি- ‘মা, আব্বা, আমি চলে আসি
তোমাদের কাছে?’ তাঁরা চমকে ওঠেন, কেমন উদ্বিগ্ন হয়ে ওঠে তাঁদের ভীরু চোখগুলো। বড় ছেলে
হিসেবে আমি সব সময় ভাই-বোনের কাছে কাছে থাকি, তাঁরা হয়ত চান।নিশ্চিন্ত থাকতে চান।ওরা
তো এখন বড় হয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয় শেষ করে চাকরি করছে, সংসার করছে। ছোটবোনটা বিশ্ববিদ্যালয়ে
পড়ছে।
ওরা তো এখন একাই চলতে পারে, চলে। তবুও মা-আব্বা চান আমি থাকি ওদের আশে পাশেই।
সেই ছোটবেলার মতই! ছোটরা বোধহয় কখনই বড় হয় না মা-বাবা’র কাছে। আহ্! আমার উপর কী রকম
আস্থা আর ভরসা! হে আল্লাহ, তুমি আমায় সব সময় শক্তি দিও, আমি যেন অতন্দ্র প্রহরীর মত
আমার পরিবারের পাশে থাকতে পারি।সব সময় মা আর আব্বার উপযুক্ত আস্থা হিসেবে নিজেকে বহাল
রাখতে পারি।
আজ বাড়ি থেকে আসার পর থেকে কেমন এক অদ্ভুত উদ্বিগ্নতা
আমাকে গ্রাস করছে। মা আর আব্বা প্রতিবারই ঢাকা আসার সময় রাস্তা পর্যন্ত আমাকে এগিয়ে
দিয়ে যান। গাড়িতে ওঠার পর যতক্ষণ আমার গাড়ি দেখা যায় ততক্ষণ অপলক দাঁড়িয়ে থাকেন। মা
কেমন চোখের জল আড়াল করেন, আব্বার মুখখানা কেমন গম্ভীর আর বিষন্ন হয়ে ওঠে! বাসে ওঠার
পর আমারও চোখদুটো কেমন ভিজে ভিজে আসে! গাড়ি তবুও এগিয়ে চলে।কিন্তু আজ, আজ আমার মন ভাল
নেই।আমি জানি না কেন।
রাব্বির হাম হুমা কামা রাব্বায়ানি সাগীরা।
০৭ আগস্ট ২০১৭, মোহাম্মদপুর, ঢাকা।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন