সূচীপত্র

শুক্রবার, মে ০৪, ২০১৮

একা হইবার পর । মিন্টু শাহজাদা


একা হইবার পর হাঁইটা হাঁইটা যাইতেছিলাম আমি।
মিরধা বাড়ির মাটির রাস্তা ধইরা হাঁইটা হাঁইটা যাইতেছিলাম অনেক দূর।
একটা বিচ্ছেদি গান না ধইরাই বরং হাঁটতেছিলাম রোইদের ভিতর দিয়া।
একা।
ওইখানে দেখতেছিলাম, রাস্তার পাশে খালের মধ্যে লোকেরা পাট জাগ দিছে।
একটা লিকলিকা নলি বাঁশের সাথে পাটের জাগ বান্ধা। খালের পানিতে স্রোত থাকে না

বইলা এত বড় পাটের জাগ ভাইসা রইছিল চিকনা নলি বাসের সাথে, চুপ কইরা।
এবং দেখছিলাম যে বাঁশের আগায় একটা মাছরাঙা পাখি বইসা বইসা ঝিমাইতেছিল।
একা।
মাছ না ধইরা একা একা পাখিটার ঝিমাইবার কী কারণ, খালের পানিতে মাছ নাই কিনা
কিংবা পাখিটার গায়ে জ্বর আসছে কিনা অথবা পাখিটার জোড়া ভাইঙা গেছে কিনা
তা না ভাইবাই আমি বরং জ্বর গায়ে হাঁটতেছিলাম। পুলের ধারে বড়ই গাছের নিচে একটা
থুত্থুইরা বুইড়া বইসা রইছে দেখছিলাম। হাঁপাইতেছিল লোকটা দুই হাটুর উপর হামু দিয়া।
একা।
বুড়ি মইরা গেছে কি না কিংবা ছাওয়ালপালে ঘর থেইকা তাড়ায়া দিছে কিনা এইসব
না ভাইবাই বরং হাঁটতেছিলাম। দূরে একটা গরু ছুইটা কাগো জানি ক্ষ্যাত খাইতেছিল।
একটা গ্যাদা ছ্যারা গরুর দড়ি ধইরা টানতেছিল। গরুর ঝ্যামটা টানে গরুরে মানাইতে
না পাইরা বরং ছ্যারাটা উপুর হইয়া পড়তেছিল বার বার। একটা লোক দৌড়াইয়া আইসা
গরুরে সামলাইছিল এবং হাইলা নড়ি দিয়া ছ্যারাটারে মারতেছিল। কানতেছিল ছ্যারাটা।
একা।
গ্যাদা ছ্যারার বাপ আছে কিনা অথবা ভাই- এইসব ভাবি নাই বরং উত্তর দিকের হালট দিয়া
হাঁটা ধরছিলাম। হাঁটতে হাঁটতে সামনে আইসা দেখছিলাম যে এক লোকে ঘাস কাটতে গিয়া
আঙুল কাইটা ফালাইছে। রক্তমাখা কাটা আঙুল মুখের ভিতর দিয়া চুষতেছিল লোকটা।
রক্ত মাটিতে পড়লে পিঁপড়ায় খাইতে পারে ভাইবা নিজের রক্ত চুষতেছিল।খাইতেছিল যেন।
একা।
একা থাকাই ভাল যেহেতু সবাই একা- এই ভাইবা লোকটার কাছে আমি যাই নাই বরং
পশ্চিম দিকের হাতাইল ধইরা হাঁটতেছিলাম বাড়ির দিকে। কালা জ্বর গায়ে নিয়া
ধান ক্ষ্যাতের ভিতর দিয়া হাঁটতে হাঁটতে দেখতেছিলাম যে দূরে একটা কাকতাড়ুয়ার গায়ে
পত পত কইরা ছেঁড়া জামা উড়তেছে। কাকতাড়ুয়াটাও পুব-পশ্চিমে দুলতেছিল আউলা বাতাসে।
একা।
মানুষেরাও পুবে পশ্চিমে দোলে সুতরাং কাকতাড়ুয়াও দুলতে পারে- এই ভাইবা আমি
হাতাইল ধইরা আগাইতেছিলাম এবং কিছু দূরে গিয়া দেখছিলাম যে ধান ক্ষেতের ভিতরে
একটা সাপে ব্যাঙ ধরছে। ব্যাঙরে ধইরা রাখতে গিয়া সাপে কাঁদার ভিতর গড়াগড়ি খাইতেছেে
এবং দেখছি যে ব্যাঙটা সাপের ফনা থেকে নিস্তার পাইতে প্যাঁও প্যাঁও শব্দ করতেছে।
একা।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন