সূচীপত্র

রবিবার, জুন ১৬, ২০১৯

আব্বা, আমরা তোমাকে ভালবাসি।

আব্বা,
আমরা তোমাকে ভালবাসি।
খুব ভালবাসি, আব্বা।
এই যে আমরা তোমার উপর অভিভাবকগিরি ফলাই, আমরা জানি এতে তোমার ভীষণ রাগ হয়, খারাপ লাগে। তবুও আমরা চাই তুমি ভাল থাকো, আনন্দে থাকো সবসময়।
ছোটবেলায় আমরা তোমার ভয়ে তটস্থ থাকতাম। তুমি কোন কাজে দূরে গেলে মায়ের সাথে আমরাও খুব অপেক্ষায় থাকতাম। দুশ্চিন্তায় থাকতাম। কখন তুমি বাড়ি ফিরবে তার জন্য হাসফাস করতাম। মাঝে মাঝে গভীর রাতে বাড়িতে ফিরলে তুমি কখনও জিলাপি, দই, রসগোল্লা, রসমালাই সাথে পাউরুটি, কখনও ফজলি আম, আনারস, রসগোল্লা, কমলা, আপেল এগুলি নিয়ে আসতে। এসব আমাদের খুব পছন্দ ছিল। আমরা তোমার আওয়াজ পাওয়া মাত্রই ধড়মড়িয়ে উঠে পড়তাম। মা তোমাকে ভাত খেতে দিত আর আমাদেরকে দিত তোমার নিয়ে আসা খাবার। ঢাকা থেকে বাড়ি ফেরার সময় বড় বড় ইলিশ মাছ নিয়ে আসতে। বোয়াল মাছও।
মাঝখানে আমাদের অবস্থা খুব সঙ্কটাপন্ন হওয়ায় কী নিদারুণ কষ্টটাই না সহ্য করতে হয়েছে তোমাদের!
আহারে!
তোমাদের কষ্ট দেখে আকাশ বাতাস ভারি হয়ে উঠেছে, আব্বা।
এতগুলো ছেলেমেয়েকে মানুষ করা কি যা তা কথা।
এসব কথা মনে হলে আমার খালি চোখ ভিজে যায়, আব্বা। হাউমাউ করে কান্না আসে।

আমরা সারাদিন পুকুরে গোসল করতাম। তোমার মানা শুনতাম না। জ্বর বাধবে, জ্বর বাধবে করে তুমি চিৎকার করতে। রেগে তেড়ে আসতে। আমরা তোমার আওয়াজ শোনামাত্রই ছুটে পালাতাম। যেদিন ধরা পড়ে যেতাম, তুমি কাঁচা কঞ্চি দিয়ে মারতে মারতে (গায়ে বাড়ি দিতে আলতো করে, মাটিতে দিতে জোরে জোরে শব্দ করে), কখনও কান ধরে টানতে টানতে বাড়ি নিতে। আমরাও কাঁদতে কাঁদতে বাড়ি যেতাম। তোমাকে খুব ভয় পেতাম আব্বা। ভালবাসতাম। তোমাকে আমরা এখনও ভয় পাই, ভালবাসি, আব্বা। খুব ভালবাসি। তুমি তা জানো, আমরা জানি।
একটা টাইম মেশিন সত্যি যদি থাকতো, তাহলে আমরা সেই পুকুরে চলে যেতাম, আব্বা। তুমি রেগে তেড়ে আসতে, কাঁচা কঞ্চি দিয়ে হালকা করে দুই একটা বাড়ি দিতে, জোরে জোরে বাড়ি দিতে মাটিতে। ভয়ে কাঁদতে কাঁদতে আমরা বাড়ি ফিরতাম।
আহা কী আনন্দটাই না হতো!
আব্বা, তুমি সব সময় ভাল থেকো, আনন্দে থেকো, সুখে থেকো। পাক পরওয়ারদিগারের নিকট একটাই প্রার্থনা, আমরা যেন তিন বাপবেটা একসাথে বুড়ো হতে পারি।
রাব্বির হামহুমা কামা রাব্বায়ানি সাগীরা।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন