সূচীপত্র

সোমবার, জুলাই ২৪, ২০২৩

একটি প্রাগৈতিহাসিক প্রেমের কবিতা

 আমি একটা ধবধবে ফর্সা মেয়ের প্রেমে পড়বো।

লম্বা, ছিপছিপে গড়নের মেয়ের বিশুদ্ধ দুধের মতোন ত্বক!
এক অনন্ত, অক্লান্ত দুপুরের প্রাগৈতিহাসিক ভিড় ঠেলে
সে আসবে রূপার মতোন রৌদ্রের ভেতর হেঁটে।
একা!
তামাটে রঙের নিঃসঙ্গ ফুটপাতের কোণায় দাঁড়িয়ে
হাত উঁচিয়ে আমি তাকে বলবো- হাই।
হিরার দানার মতো চকচকে হাসি হেসে,
উত্তর দেবে সে- হাই!
আষাঢ়ের জোছনার মতো আধছায়া আলোর রেঁস্তোরায়
টেবিলের দুই প্রান্তে বসে আমরা নেবো-
তেতুল বীচির রঙের ধোঁয়া ওঠা দুই পেয়ালা কফি!
কী সুন্দর ঘ্রান!
গাবগাছের সন্ধ্যার মতো আবছা আলোয়
স্থবির চোখে আমি শুনবো তার নতুন সংসারের গল্প!
কিংবা জানালা ভেদ করে অস্পষ্ট চোখে তাকিয়ে থাকবো
পুব প্রান্তে ধূসর রঙের নিঃসঙ্গ মিনারের দিকে।
একটু পর তার নয়া সহধর্মী আসবে। কিংবা প্রেমিক!
আমি তাঁকে বলবো- নাইস টু মিট ইউ!
কিংবা নির্জন বনে অশ্বত্থের ছায়ার মতো কালো
একটা ধ্রুপদী রূপসী মেয়ের প্রেমে আমি পড়বো!
প্রাচীন ব্যবিলনে হাটফেরত ক্লান্ত নারীর মতোন
ঢেউ খেলানো শরীরে তার কী দারুণ মায়া!
শীতের সকালে দুধ-চিনিতে ভেজানো চিতোই পিঠার মতো
নরম একটা হৃদয় নিয়ে সে, কাছে এসে বলবে- কেমন আছো?
আহ! কী সুন্দর কন্ঠ তার!
যেন ভরদুপুরে গাছের ছায়ায় কৃষ্ণকায়া রূপসী
এসরাজ বাজিয়ে মাতাল করে দেবে সব হাটফেরত পুরুষের!
আমারে বেসেছে সে ভাল- এই ভেবে যেন
হেঁটে যাবো আমি সব প্রাগৈতিহাসিক নদীর নরম কিনার ধরে
কিংবা রাইন থেকে ভোলগা, পদ্মা, গঙ্গা, মিসিসিপি
অথবা মহেশখালি হয়ে বর্মা, চীন, রাশিয়া, তুরস্ক!
বহুদিন!
কোন এক শ্রাবণ মাসের গভীর স্যাঁতসেতে সন্ধ্যায়
দেখবো তারে আমি অবুঝ প্রেয়সীর মতো
বয়সী প্রেমিক কিংবা অর্ধাঙ্গীর সাথে
নগরীর নিষ্প্রদীপ রাস্তায় হাত ধরাধরি করে যেতে।
একটা নোনাধরা নোংরা দেয়ালের ধারে
আধমরা কাঁঠাল গাছের নিচে,
আধখাওয়া সিগারেট হাতে আনমনে আমি বলবো- ওয়াও! ভেরি নাইস!
আমারে বাসে নাই কেউ ভাল কোনদিন
এই ভেবে ভেবে আমি হেঁটে যাবো উত্তরের পথ ধরে
একটা বুভুক্ষ হৃদয়ের কুকুরের কাছে
কিংবা আমি হেঁটে হেঁটে চলে যাবো বাসস্ট্যান্ড!
একটা জলপাই রঙের বাসে ওঠার পর
বসে থাকবো আমি।
একা!
চোখ বুজে!
জগতের ঘরছাড়া অবসাদ ধেয়ে ধেয়ে আসবে আমার তামার বর্ণের শরীরে, চোখে, মুখে কিংবা হৃদয়ে!
আটলান্টিকের মহাপ্রলয়ের ঢেউয়ের মতো
আছড়ে আছড়ে পড়বে আমার ব্যথা, বেদনা, হাহাকার!
আহা! আহ!
সাদা কবুতরের মতো সুন্দর একটা চশমা চোখের নাতিদীর্ঘ রমণী
নিঃশব্দে এসে
কচি পাতার মতো নরম গলা নিয়ে অকস্মাৎ আমারে কবে,
ক্যান আই সিট হেয়ার?
আচ্ছন্নের মতোন চোখে, মৃদুকন্ঠে আমি বলবো-
শিওর! প্লিজ!
এখানে কেউ বসে নাই।

১৮ জুলাই ২০২৩
ধানমন্ডি, ঢাকা

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন