ইতিহাসকে বিজ্ঞান না বলা হলেও প্রকৃতার্থে
ইতিহাস ও দর্শণ মিলেই বিজ্ঞান। সকল আবিষ্কার ও উদ্ভাবনই ক্রমাগত ইতিহাস ও বর্তমানকে
নিবিড় পর্যবেক্ষণের (Observation)ফল। কোন জাতির উন্নয়নকে বৈজ্ঞানিক পরিণতি দেবার জন্য
ইতিহাস হল প্রধানতম উপকরন।ইতিহাসের ফলাফল বিশ্লেষনপূর্বক যে কোন সমাজ, সংগঠন কিংবা
রাষ্ট্রের বর্তমান অবস্থান হতে ক্রমোন্নয়নের পথে ধাবিত করা সম্ভব।কোন প্রতিষ্ঠিত সমাজ,
রাষ্ট্র কিংবা সংগঠনের সফলতার কারন অথবা
কোন ব্যর্থ সমাজ, রাষ্ট্র, কিংবা সংগঠনের ব্যর্থতার কারণ অনুসন্ধানের জন্য ইতিহাসের অধ্যয়ন জরুরী। সফল নেতৃত্বের জন্য ঐতিহাসিক ঘটনাবলীর ফলাফল জানা, সফল নেতাদের নেতৃত্বের কৌশল অনুধাবন, বিশ্বস্ত কর্মী সৃষ্টিতে সফল নেতাদের কর্মকান্ড পর্যালোচনা ও সেই মোতাবেক কর্মপদ্ধতির অনুসরণ আবশ্যক।
কোন ব্যর্থ সমাজ, রাষ্ট্র, কিংবা সংগঠনের ব্যর্থতার কারণ অনুসন্ধানের জন্য ইতিহাসের অধ্যয়ন জরুরী। সফল নেতৃত্বের জন্য ঐতিহাসিক ঘটনাবলীর ফলাফল জানা, সফল নেতাদের নেতৃত্বের কৌশল অনুধাবন, বিশ্বস্ত কর্মী সৃষ্টিতে সফল নেতাদের কর্মকান্ড পর্যালোচনা ও সেই মোতাবেক কর্মপদ্ধতির অনুসরণ আবশ্যক।
নেতৃত্ব হলো পবিত্র কর্ম। কোন
মহৎ উদ্দেশ্যে সৎ, দক্ষ, নিষ্ঠাবান, আন্তরিক
এবং নি:স্বার্থ নেতৃত্ব
কোন পরিবার, সমাজ, সংগঠন, কিংবা
মানব গোষ্ঠীকে সফলতা ও শান্তির
পথে নিয়ে যায়।
এর জন্য দরকার সুক্ষতা
ও বিচক্ষণতা। ভাল
কর্মী হলো কোন সংগঠনের
প্রাণ। সৎ,
নিষ্ঠাবান এবং নি:স্বার্থ কর্মী
ছাড়া সংগঠন যেমন অকল্পনীয়,
তেমনি ভাল নেতা ছাড়াও
সংগঠন সফলতার মুখ দেখে
না। ভাল
কর্মী সৃষ্টিতে নেতার ভুমিকা অনেকাংশে
মুখ্য। মূল্যায়ন
ও বিশ্বস্ত কর্মী একে অপরের
পরিপূরক। যেখানে
যথাযথ মূল্যায়ন নেই, সেখানে ভাল
কর্মীদের মধ্যে হতাশা ও
অবিশ্বাস কাজ করে। কর্মীরা উৎসাহ হারিয়ে ফেলে
এবং ধীরে ধীরে
বিচ্ছিন্ন ও নিস্ক্রীয়
হয়ে পড়ে। বিচক্ষণ
নেতার প্রধানতম গুণ হলো বিশ্বস্ত
কর্মীদের সনাক্তকরণ এবং তাঁদের
যথাযথ মূল্যায়ন। এর
ব্যত্যয় ঘটলে নেতৃত্ব টেকে
না। ভন্ড
ও বিপজ্জনক কর্মীদেরকে ভয় পাওয়া এবং
ভয়ে ভয়ে তাঁদেরকে সন্তুষ্ট
করার প্রচেষ্টা নেতার সবচেয়ে দূর্বল
দিক। এতে
করে নেতা নিজেই নিজের মারাত্মক সর্বনাশ
ডেকে আনে।ধীরে ধীরে নেতার পাশ থেকে ভাল কর্মীরা দূরে সরে যায় এবং নেতা একা হযে যায়।
নেতা আর নেতা থাকে না। সমাজ, সংগঠন তখন উদ্ভট শকুনদের দখলে চলে যায়।এ কারনে সফল নেতাদের
মধ্যে সততা, সাহস, প্রজ্ঞা, বিচক্ষণতা এবং পর্বতকঠিন ব্যক্তিত্ব থাকা আবশ্যক।
১৭৫৭ সালে স্বাধীনতার সূর্য অস্তমিত হয়েছিল।ধূর্ত
ঔপনিবেশিক শক্তি বাংলার মানুষের সরলতা ও ভাল মানুষীর সুযোগ নিযে সূচ হয়ে ঢুকে ফাল হযে
বের হয়েছিল।সুদীর্ঘ সময় ধরে বাংলার মানুষ ঔপনিবেশিকতার যাতাকলে পিষ্ট হযেছে।এটা ছিল
বাংলার নেতৃত্বের প্রথম দূর্বলতা।দূরদর্শীতার অভাবে বাংলার নেতৃত্বের প্রথম পতন অবশ্যম্ভাবী
হয়ে উঠেছিল।এ যেন এক মহাকাব্যিক পতন!তারপর কেবল ইতিহাস আর ইতিহাস।উপমহাদেশের মাটিতে
হাজারো নেতৃত্বের জন্ম হয়েছে।জীবদ্দশায় মুক্তির স্বাদ না মিললেও অনেকে নিজের জীবন দিয়ে
মুক্তির ভিত নির্মাণ করে দিয়ে গেছেন।হাজারো বিদ্রোহ হয়েছে দেশে।অধিকাংশ বিদ্রোহই ব্রিটিশ
শোষকের দমন নিপীড়নের কাছে টিকতে পারেনি কিন্তু সে সকল বিদ্রোহগুলোই পরবর্তী সংগ্রামের
বীজ বপন করে দিযে গেছে।বিশেষত পরাধীন ভারতবর্ষের পূর্ববঙ্গ অংশের মুক্তিলাভ ছিল সর্বাপেক্ষা
কঠিন।আজকের ভারত ১৯৪৭ সালে পরিপূর্ণ সার্বভৌমত্ব লাভ করলেও বাংলাদেশ তখনও স্বাধীন হতে
পারেনি।পাকিস্তান নামক নব্য ঔপনিবেশিক শক্তির কাছে বন্দী হয়ে পড়েছিল।এ বন্দীদশা থেকে
উত্তোরণের পথ খুঁজেছে বাংলাদেশ।এ মুক্তিকে বাস্তবে রূপ দেবার জন্য বাংলার মানুষ সোচ্চার
হয়েছে। বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন, ছেষট্টির দূ:সাহসিক ছয় দফা আন্দোলন, ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান,
একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ- আন্দোলনের এই ধারাবাহিকতাই বাংলাদেশকে ক্রমাগত মুক্তির দিকে
ধাবিত করেছে।
সত্যি বলতে কি, এদেশের মাটিতে বিভিন্ন সময়ে
নানাবিধ বিদ্রোহ, আন্দোলন সংঘটিত হলেও শোষক শ্রেণীর ক্রমাগত দমন নিপীড়নের কারনে তা
চূড়ান্ত পরিণতি লাভ করতে পারেনি। যদিও এক একটি আন্দোলন পরবর্তী আন্দোলনের শক্ত ভিত
নির্মাণ করে দিয়ে গেছে।লাখো মানুষের রক্ত, আত্মত্যাগ ও পরিশ্রম আজকের বাংলাদেশ সৃষ্টির
প্রধান নিয়ামক।আর গণমানুষের মধ্যে বিশ্বাস, আস্থা ও মুক্তির তৃষ্ণা জাগানিয়া নেতা হিসেবে
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের নামই অগ্রগণ্য।বাংলার মানুষকে পরাধীনতার শৃঙ্খল থেকে মুক্ত করার
স্বপ্নকে বাস্তবে রূপদান করার জন্যই এ মহান নেতার আবির্ভাব হয়েছিল। তাঁর দূর্দমনীয়
নেতৃত্ব, পর্বতকঠিন ব্যক্তিত্ব, বাংলা ও বাংলার মানুষের প্রতি অকৃত্রিম দরদ ও ভালবাসার
কারণেই আজকে বাংলাদেশ স্বাধীনতার স্বাদ গ্রহণ করতে পেরেছে। বিশ্বের বুকে মাথা তুলে
দাঁড়িয়েছে বাংলা, বাংলাদেশ।
কে ছিলেন বঙ্গবন্ধু? কী ছিল তাঁর ব্যক্তিত্বে?
পৃথিবীর ইতিহাসে অবিসংবাদিত মহাপুরুষ হয়ে ওঠার মতো কী আদর্শ ছিল তাঁর? আজ ও আগামীর
নেতৃত্বকে তা পুরোপুরি অনুধাবন করতে হবে। বঙ্গবন্ধুর মতো ব্যক্তি স্বার্থের ঊর্ধ্বে
থেকে শুধুমাত্র দেশমাতৃকা ও মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠায় কাজ করে যেতে হবে।
আজকের বাংলাদেশে বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে যারা
ধারণ করে, বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়ার জন্য, মানুষের জন্য বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত কাজ
সম্পন্ন করার জন্য যাঁরা নিরলসভাবে দিনরাত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন, তাঁদেরকে বাধাগ্রস্ত
করার লোকেদের অভাব নেই। একাত্তরে স্বাধীনতার বিপক্ষের শক্তি আজও মাথা চাড়া দিয়ে উঠেছে।এদের
মধ্য থেকে কিছু কিছু লোক এবং তাদের উত্তরসূরীরা আবার নব্য আওযামীলীগার হয়ে উঠেছে! কী
তাদের উদ্দেশ্য? ব্যক্তিগত সুবিধা গ্রহণ? নাকি পঁচাত্তরের ১৫ আগস্টের পুনরাবৃত্তির
জন্য ব্রিটিশ বেনিয়াদের মতো সূচ হয়ে ঢুকে ফাল হয়ে বেরুনোর নীল নকশা? এইসকল নব্য বেনিয়াদের
পৃষ্ঠপোষকদেরও অভাব নেই। বাসে, লঞ্চে, আগারে, বাগারে, অফিসে, আদালতে, মাঠে, ঘাটে সর্বত্রই
এদের পৃষ্ঠপোষক।স্বাধীনতার পক্ষের শক্তিদেরকে ক্রমাগত হয়রানি, দমন করার অপচেষ্টায লিপ্ত
এইসকল কুলাঙ্গারেরা।
ইতিহাস ভুলে গেলে চলবে না। ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি
হবার আগেই এখনই সময় এদের চিহ্নিত করার।দেশ ও জাতির স্বার্থে এদেরকে চিহ্নিত করুন এবং
বয়কট করুন।সৎ নেতৃত্ব এবং সত্য, সততা ও স্বাধীন বাংলাদেশের জয় হোক। বাংলাদেশ চিরজীবি
হোক। জয় বাংলা।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন